শনিবার, ১২ মে, ২০১৮

মায়ের অকৃত্রিম ভালোবাসা

Add https://mdrajumathju.blogspot.com/
মায়ের অকৃত্রিম ভালোবাসা
      মা বিশাল  তাৎপর্যময় ছোট্ট একটি শব্দ । প্রত্যেক মানুষের জীবনের সূত্রপাত থেকে শুরু করে প্রাপ্ত বয়ষ্ক হওয়ার পরেও মায়ের যে ত্যাগ, মায়া-মমতা,আবেগ-অনুভূতি,ভালোবাসা,অনুশাসন সব ই এই ছোট্ট “মা” নামক শব্দটি ধারণ করে থাকে সামান্য লেখনীর মাধ্যমে এই শব্দের প্রকৃত তাৎপর্য তুলে ধরা কঠিন বিষয়।

           আমার বয়স বর্তমানে ২১ বছর। জ্ঞান হওয়ার পর থেকে এই পর্যন্ত মা-ই আমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা দিয়েছেন এবং সময়ে  শাসনও করেছেন।

          বছরের অধিকাংশ সময়ই বাবা বাইরে থাকতেন। উনার সাক্ষাৎ বছরে ৮-১০ বার এর বেশি পেতাম না বলতে গেলে, আম্মু-ই আমাকে ও আমার ছোট দুই বোনের লালন-পালন করেছেন। তিনি খুবই স্নেহ করতেন এবং সময়ে কঠোর অনুশাসন করেছেন। হয়তো এই কারনেই আমি মানুষকে ঘৃণার পরিবর্তে অধিক ভালবাসতে শিখেছি। 
          ৪র্থ শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হলে বাবা তখন ব্যবসা নিয়ে চট্রগ্রামে  ব্যস্ত। এই সময়ে আমি সিনেমা দেখায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ি। প্রায়ই রাত ১০ টায় সিনেমা দেখে বাসায় আসতাম,তাতে মা খুব-ই বকতো। একদিন মা আমা্কে মারার জন্য হাতে লাঠি নেয়, আমি দেখেই তো দে দোড় ,দে দোড় করে পালিয়ে  যাই  অন্ধকারে ।
 মা বলে  উঠলো ,” দাড়া বাবা, অন্ধকারে কোথাও যাসনে ।“
কন্ঠটা কেমন ভাঙ্গা মনে হলো। হৃদয়ের কোথাও যেনো চিন চিন করে উঠলো। বুঝলাম, আম্মু খুব কষ্ট পেয়েছে।
              “মা... ,মারলে কিন্তু আসবো না....।”
              “মারবো না বাবা, চলে আয়”। বেঁচে গেলাম বটে!!!!

         খুবই দুষ্টু প্রকৃতির ছিলাম। পড়া-লেখা , স্কুলে যাওয়া ভালো লাগতো না। যখনই সুযোগ পেতাম ,ফাঁকি দিতাম  আমাদের বাড়িতে বড়ো একটি তেঁতুল গাছ ছিলো। ওইটায় উঠলে নীচ থেকে সহজে দেখা যেতো না। একদিন স্কুলে যাওয়ার ভয়ে গাছে উঠি এবং  তেঁতুল খেয়ে সময় পার করতে লাগলাম।  এদিকে আম্মু অধীর চিন্তায় পরে আমায় খুজতে লাগলো। বাড়ির পাশে রাস্তায় গিয়ে আমার বন্ধু-বান্ধবদের জিজ্ঞেস করছিলো।আশ- পাশের বাড়িতে ও খোঁজ নেয়। খুজছে তো খুজছেই, এই দেখে মনে মনে খুব হাঁসছি আর মজা নিচ্ছি। সন্ধার কিছুক্ষণ আগে হঠাৎ সামনে হাজির হলাম,তাৎক্ষণিক বুঝতে পারলাম দুই গালে বজ্রপাত হয়েছে। গালে হাত দিতেই অনূভূত হলো, এই বুঝি গরম তেলে হাত রাখলাম! হাউ-মাউ করে কান্না করতে লাগলাম। চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পরছে। মা আমার হাত ধরে জোর করে টেনে ঘরে নিয়ে যাচ্ছে,”আমি যাবো না, যাবো না” বলে কান্না করছি।হঠাৎ মায়ের মুখে চোখ পরতেই আমি হতভম্ভ, মা ও কাঁদছে!! কান্না বন্ধ করে ঘরে যাই।

 সে দিন বুঝলাম, আমি কষ্ট পেলে মা ও কষ্ট পায়!!

          বড়ো আম্মু, একদিন অভিযোগ করলো যে আমি উনার টাকা চুরি করেছি। শুনে মা খুবই রাগ করলেন এবং ৫-৭ জন ছেলেকে পাঠালেন আমায় ধরে আনতে। আমার এখনো মনে আছে, ওরা কোলে করে আমায় ধরে এনে মায়ের হাতে তুলে দিয়েছিলো। মা চিকন লাঠি দিয়ে আমাকে মারছিলো আর বলতে লাগলো,
          ”টাকা কেন চুরি করলি, কেন চুরি করলি??”
          “আমি চুরি করিনি মা, আমি চুরি করিনি!!”পরে মা ক্লান্ত হয়ে ঘরে চলে গেলে,এক চাচি আমায় ঘরে দিয়ে আসে।
খুব কাতর সুরে জিজ্ঞেস করলো,“তুই সত্যি টাকা চুরি করিসনি??”
”না মা। আমি চুরি করিনি।“
এই শুনে মা আমাকে আদর করে বুকে টেনে নিয়েছিল। আমি অনুভব করছিলাম তিনি নিঃশব্দে কান্না করছিলো......। 

           তখন বুঝতে পারিনি, কেন দু চোখের কোটর লোনা পানিতে ছল-ছল করেছিলো!! এখন বুঝতে পারছি, মাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ ছিলো সন্তানের প্রতি মায়ের স্নেহ, মায়া-মমতা আর অকৃত্রিম ভালবাসা।

           আমি ও আমার ছোট বোনদের যে কোন বিপদে মা যায়নামাজে বসে দু হাত তুলে চোখের পানি ছেড়ে আল্লাহ’র কাছে দোয়া করতেন!

           ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণি ,এই দুই বছর চট্রগ্রামে বাবার সাথে  মায়ের সাহচার্য ছাড়া কাটিয়েছিলাম অনেক কষ্টে!বাবাও খুব আদর করতো। তারপরেও কেন জানি মাঝে মাঝে রাতের অন্ধকারে বাঁলিশে মুঁখ গুজে ঢুকরে ঢুকরে কেঁদেছি আর মা’কে ডেকেছি........

           ঢাকায় থাকাকালীন ২০১৫ সালের কথা, প্রচন্ডভাবে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলাম। খুব মাথা ব্যাথা করতো এবং কিছুক্ষন পর পর জ্বর আসতো।দাঁতের মাঁড়ির অত্যধিক ব্যথায় চিবানোর ভয়ে খাবার খেতে পারতাম না। কলেজের বন্ধুরা যথাসাধ্য যত্ন নিয়েছিলো । তার পরেও বাস্তবতা হলো মায়ের অভাব অপূরনীয়। ঐ সময়ে আম্মুকে খুব স্মরন করেছিলাম। ভাবতাম, এখন যদি মা চলে আসতো......।

           ছোট বেলা থেকেই শাঁক ভাজি ও বিভিন্ন প্রকার ভর্তা খেতে পছন্দ করতাম। আম্মু খুব যত্ন সহকারে রান্না করে খাওয়াতেন। এখনো বাসায় গেলে আমি মুখ ফস্কে বলার আগেই পছন্দের খাবার পাতে তুলে দিতে অভ্যস্ত।

           পৃথিবীতে নিঃস্বার্থ ভালবাসা’র চিরন্তন দৃষ্টান্ত পিতা-মাতা। হয়তো এজন্যই শিল্পীর কন্ঠে ধ্‌বনিত হয়েছে...
স্বার্থকে ত্যাগিয়া, বুকে মোরে আগিয়া
মা-বাবা গেলো গোরে চলিয়া.........

            মায়ের আত্মত্যাগ-নিঃস্বার্থ ভালবাসা মূল্য পরিশোধযোগ্য নয়। হয়তো এই কারণেই  শিল্পীর কন্ঠে আবারও ধ্বনিত হয়েছে...
মায়ের এক ধার দুধের দাম, কাটিয়া গায়ের চাম
পাপোষ বানাইলেও ঋণের শোধ হবেনা...  

 আমি বিশ্বাস করি, পৃথিবীর সকল মা ই আমার মায়ের মতো......। 
 
           আজ মা আমার কাছ থেকে অনেক দূরে। মায়ের হাতের রান্না,মাথার উপর মায়া-ময়ী হাত, মজার মজার গল্প শোনা, মাঝে-মধ্যে বকা খাওয়া,ঘুম পাড়ানো
মাসি-পিসির গান শুনা ইত্যাদি হৃদয়-স্পর্শী বিষয় থেকে  বঞ্চিত। কিন্তু ,মায়ের স্নেহ, মায়া-মমতা, ভালবাসা, দোয়া প্রভৃতি অশরীরী সংস্পর্শ আমায় ঘিরে আছে। অনুভব করি, মা সব সময় আমার কাছেই আছে......।

           এই দিনে মা’কে খুব ই মিস করছি। হাজারো  সন্তান যারা আমারই মতো মায়ের কাছ থেকে অনেক দূরে, তারাও নিশ্চয় মা’কে খুব মিস করছে। এমন সবার পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করে আমি প্রত্যেক মায়ের প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালবাসা নিবেদন করছি...।  সেই সাথে আমাদের ভুল ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি,
মা , আমরা দুর্বল, অক্ষম, তোমার সঠিক মর্যাদা দিতে পারিনি, সঠিক মূল্যায়ন করতে পারিনি - ক্ষমা করে দাও মা ,আমাদের ক্ষমা করে দাও.........

মোঃ ইয়াছিন আরাফাত (রাজু)
গণিত বিভাগ, জাবি

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন